মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫২ অপরাহ্ন
উজিরপুর প্রতিনিধি॥ নদীর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ৯নং গুঠিয়া ইউনিয়নের সেই সব চিরচেনা গ্রামগুলো। বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে সব হারাতে শুরু করছে উজিরপুরের মানচিত্রের বেশ কয়েকটি গ্রামের নদী পাড়ের মানুষ।
উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের মানুষের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছর ধরে ওই ইউনিয়নের শতশত পরিবার নদীগর্ভে তাদের ভিটাবাড়ি হারিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। উজিরপুরের মানচিত্র থেকে গুঠিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দাশেরহাট বাজার, হানুয়া, আশোয়ার, বান্না, রৈভদ্রাদী, নিত্যানন্দী, ও কমলাপুর গ্রাম বিলুপ্তি হওয়ার পথে।
ইতিমধ্যে হানুয়া বারপাইকা গ্রাম, আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার, বড় বাড়ি জামে মসজিদ, হানুয়া মাদরাসা, কালীখোলা মন্দির কয়েক মাস আগে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষ নদী ভাঙনের দুঃচিন্তায় রাত কাটাচ্ছেন। হুমকির মুখে রয়েছে কাকরাদাড়ী বেড়িবাঁধ প্রকল্প, দাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হানুয়া দাখিল মাদরাসা, পায়রা বন্দর থেকে কোটালীপাড়া সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি টাওয়ারসহ অসংখ্য বসতবাড়ি।
পানি উন্নায়ন বোর্ড নদী ভাঙন রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আজ বুধবার সকাল ১০টায় ঐতিহ্যবাহী দাসের হাট বাজারে ওই ছয়গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে দাশেরহাট বাজার কমিটির সভাপতি দুলাল খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গুঠিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ইউপি সদস্য হানিফ মোল্লা, শহীদুল ইসলাম, মনির হোসেন. মহিলা ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম, শাহানাজ পারভিন, রাহাত চৌকদ্দার, যুবলীগ নেতা জাহিদ হোসেন লালন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দ্রুত এই ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ না নিলে উজিরপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে গুঠিয়া ইউনিয়ন। হানুয়া গ্রামের তন্ময় বলেন, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবাড়িসহ সবকিছু হারিয়েছেন। এখন অন্যত্র গিয়ে কোনো রকম দিনযাপন করছি।
১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হানিফ মোল্লা বলেন, আমার বাবার পত্রিক সম্পত্তিসহ ১০ একর সম্পত্তি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডের ৫০০-৬০০ ভোটার থাকেন অন্য ইউনিয়নে।
গুঠিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই ছয় গ্রাম বিলুপ্তির পথে। ওই গ্রামগুলোর অধিকাংশ আজ নদী গর্ভে চলে গেছে। এ বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। হাজার মানুষ নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সন্ধ্যা নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলে ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু করব।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণতি বিস্বাস বলেন, উজিরপুরের নদী ভাঙন এখন বড় সমস্যা। তবে এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।
Leave a Reply